সঞ্চয়পত্র কি? সঞ্চয়পত্র করার নিয়ম সম্পর্কে সর্বশেষ তথ্য

আপনি যদি ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে সঞ্চয় করতে চান, তাহলে সঞ্চয়পত্র করার জন্য আপনার সামনে অনেকগুলো অপশন খোলা রয়েছে, যেখানে আপনি সঞ্চয় করার কাজ সম্পন্ন করতে পারেন।

সঞ্চয়পত্র করার আগে আপনাকে যে সমস্ত বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে এবং সঞ্চয় করার ক্ষেত্রে আপনি কোন কোন ব্যাংকের সঞ্চয় করতে পারবেন, সে ক্ষেত্রে সঞ্চয় করলে কি রকম উপকার পাবেন সেই সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য এখান থেকে জেনে নিতে পারবেন।

সঞ্চয়পত্র আসলে কি?

আপনি যদি ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে নির্দিষ্ট এমাউন্টে টাকা জমিয়ে রাখেন এবং তারপরে সেটি যদি পরবর্তীতে উইথ ড্র করে তারপরে আপনার নিজস্ব কাজে ব্যবহার করতে পারেন তাহলে সেটিকে সঞ্চয়পত্র বলা হবে।

এছাড়া বিভিন্ন ব্যাংকের সঞ্চয়পত্র জমানোর ক্ষেত্রে যে সমস্ত ব্যাংক আপনাকে বিশেষ সুবিধা দিয়ে থাকে, যাতে করে কোন রকমের অসুবিধা সম্মুখীন হওয়া ছাড়াই আপনি টাকা জমা রাখতে পারেন।

সঞ্চয়পত্র করার চিন্তা করার অন্যতম একটি কারণ হলো, ভবিষ্যতে কি হবে সেটা সম্পর্কে অনিশ্চিত অবস্থা। এবং ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে, ভবিষ্যৎকে আরো বেশি সুখকর করার জন্য টাকা জমানো।

যে কোন ব্যাংকের সঞ্চয় করার নিয়ম কি?

আপনি যদি যেকোনো ব্যাংকের সঞ্চয় করতে চান তাহলে সর্বপ্রথম আপনাকে সেই সমস্ত ব্যাংকের ডিপিএস সম্পর্কে তথ্য জেনে নিতে হবে। অর্থাৎ কোন ব্যাংকে টাকা জমালে কি কি রকমের সুবিধা রয়েছে সেটি সম্পর্কে জেনে নিতে হবে।

এতে করে আপনি আপনি নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য যদি টাকা জমাতে চান তাহলে সেই নির্দিষ্ট মেয়াদে টাকা জমানোর ক্ষেত্রে আপনি কোন ব্যাংক বেছে নিতে পারবেন সেই সম্পর্কে নিশ্চিত ধারনা অর্জন করতে পারবেন।

এরই ধারাবাহিকতায় আপনি যদি বাংলাদেশের প্রত্যেকটি নামকরা ব্যাংকের সঞ্চয় পত্রের নিয়ম কিংবা ডিপিএস রেট সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য জেনে নিতে চান, তাহলে সেই সংক্রান্ত তথ্য নিচে থেকে জেনে নিন।

জেনে নিন: সকল ব্যাংকের ডিপিএস রেট

উপরে উল্লেখিত আর্টিকেলটি দেখে নিলে বাংলাদেশে যে সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যাংক রয়েছে সে সমস্ত ব্যাংকের ডিপিএস রেট সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য জেনে নিতে পারবেন।

এবার আপনি যদি জিপিএস রেট সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানেন তাহলে ব্যাংকে টাকা সঞ্চয় করার নিয়ম সেরকম কোনো কঠিন নিয়ম নয়। এটা একটা সহজ কাজ বললেও চলে।

এবার আপনি যদি কোন একটি ব্যাংকে টাকা সঞ্চয় করতে চান তাহলে আপনাকে নিম্ন বর্ণিত বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে।

  • সর্বপ্রথম আপনি কোন ব্যাংকে টাকা সঞ্চয় করতে চান সেটি নির্বাচন করে নিবেন।
  • ব্যাংক নির্বাচন করে নেয়ার পরে, যে ব্যক্তি সঞ্চয় করতে চান, তার এনআইডি কার্ড/ পাসপোর্ট/ ড্রাইভিং লাইসেন্স এবং দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি এর প্রয়োজন হবে।
  • যে ব্যক্তিকে নমিনি হিসেবে নির্বাচন করবেন সেই ব্যক্তির একই রকমের তথ্যের প্রয়োজন হবে।
  • ইউটিলিটি বিলের কপি প্রয়োজন হবে।
  • এছাড়াও আপনার ইনকামের সোর্সের প্রয়োজন হবে। সর্বশেষ ৬ মাসের ইনকাম স্টেটমেন্টের প্রয়োজন হবে।

এবং এই সমস্ত তথ্য নিয়ে যখনই আপনি ব্যাংকে চলে যাবেন তখন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট তৈরি করার জন্য একটি একাউন্ট ওপেনিং ফরম দিবে।

এবং এই একাউন্ট ওপেনিং ফরম থেকে আপনি আপনার প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো নির্বাচন করে নিতে পারবেন। অর্থাৎ, আপনি কত মাসের জন্য ডিপিএস একাউন্ট তৈরি করতে চান এবং একই সাথে আপনি প্রতি মাসে কত টাকা জমা দিতে পারবেন সেই সংক্রান্ত তথ্য সম্পর্কে এই ফর্মটি ফিলাপ করে নিতে হবে।

এবং যখনই এই ফরমটি আপনি ফিলাপ করে নিবেন, তখন একাউন্টে জমা রাখার জন্য নির্দিষ্ট অ্যামাউন্টে টাকা জমা দিয়ে তারপরে একাউন্ট তৈরি করার কাজ সফলভাবে সম্পন্ন করতে পারবেন।

যখন অ্যাকাউন্ট তৈরি করার কাজ সফলভাবে সম্পন্ন করে ফেলবেন তখন আপনি প্রতি মাসে টাকা জমা রাখতে পারবেন। এবং এভাবেই, নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে অবধি টাকা জমা রাখতে হবে।

সঞ্চয়পত্র থেকে টাকা কিভাবে তুলব?

ডিপিএস কিংবা সঞ্চয়পত্র থেকে আপনি যদি টাকা তুলতে চান তাহলে আপনাকে নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য টাকা জমা রাখতে হবে।

অর্থাৎ আপনি যদি তিন বছরের জন্য একটি ডিপিএস একাউন্ট তৈরি করেন, তাহলে তিন বছর যখন শেষ হয়ে যাবে তখন আপনি সেই ডিপিএস একাউন্ট থেকে টাকা তুলতে পারবেন।

অর্থাৎ যখনই মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে, তখন আপনি ব্যাংকে গিয়ে এই সম্পর্কে ব্যাংকের কর্মকর্তাদের অবগত করলে তারা আপনার ডিপিএস একাউন্টে জমানো যত টাকা রয়েছে, সেটি তারা পর্যায়ক্রমে আপনাকে দিয়ে দিবে।

অর্থাৎ আপনি যে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ব্যাংক একাউন্টে টাকা জমা রেখেছেন কিংবা সঞ্চয় করেছেন সেই নির্দিষ্ট সময় যদি অতিক্রম হয়ে যায়, তাহলে আপনি সেখান থেকে আপনার ডিপিএস একাউন্ট ভাঙ্গিয়ে টাকা তুলতে পারবেন ।

মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্বে কি টাকা তোলা যাবে?

আপনি যদি নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্বে কোন কারণে টাকা তুলতে চান, তাহলেও সেটি করতে পারবেন। সেজন্য আপনাকে নির্দিষ্ট পরিমাণে জরিমানা দিয়ে তারপরে টাকা তুলতে হবে।

এবং এই জরিমানার পরিমাণ সর্বনিম্ন ৩০০ টাকা হতে পারে।

ডিপিএস এ টাকা জমানো আসলে কি উচিত?

ডিপিএস এ টাকা জমানো আসলে উচিত কিনা সেই সংক্রান্ত তথ্য যদি জেনে নিতে চান, তাহলে নিম্ন বর্ণিত দুইটি সহজ কারণ কিংবা উদাহরণ সম্পর্কে জেনে নিলে এই সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে বুঝে নিতে পারবেন।

প্রথম কারণ:

একটু সহজে উদাহরণ দিলে এই বিষয়টি সহজেই বুঝে যাবেন। যেমন: মনে করুন, আপনি একটি ডিপিএস একাউন্ট তৈরি করলেন তাও আবার ১০ বছর মেয়াদের জন্য।

যখন আপনি এই ডিপিএস একাউন্ট তৈরি করেছেন তখন এক কেজি চাল আপনি ক্রয় করতেন ১০ টাকা দিয়ে। এবং সেই সময়ে আপনি একটি ডিপিএস অ্যাকাউন্ট তৈরি করেছেন এবং একাউন্টে জমা রেখেছেন ১০ টাকা।

কিন্তু যখন মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে, তখন হয়তো আপনার এই ১০ টাকা এই নির্দিষ্ট অ্যামাউন্ট থেকে ২০ টাকা রূপান্তরিত হয়ে গেছে। কিন্তু এটা কি কখনোই সম্ভব ১০ বছর পরে একটি জিনিসের দাম একই রকম থাকবে?

হতে পারে, আপনি যে চাল ১ কেজি ১০ টাকা দিয়ে ক্রয় করতেন সেটি বর্তমানে ক্রয় করতে হয় ৩০ টাকা দিয়ে। তাহলে এখানে আপনার লাভ কি হল? উল্টো আপনি ক্ষতির সম্মুখীন হলেন। কারণ যে কোন জায়গায় মুদ্রাস্ফীতি খুবই স্বাভাবিক একটা বিষয় হয়ে পড়েছে।

দ্বিতীয় কারণ:

আপনি যদি লক্ষ্য করেন তাহলে দেখতে পারবেন আপনি যখন একটি সঞ্চয় করেন তখন সঞ্চয় করার ক্ষেত্রে আপনাকে ব্যাংক থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণে মুনাফা দেয়৷ যেটাকে সহজ ভাষায় সুদ বলে।

এবং ব্যাংকে টাকা জমানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে অনিরাপদ এবং একই সাথে গর্হিত একটি কাজ হলো সুদ। যেকোনভাবে আপনাকে সুদ থেকে বিরত থাকতে হবে। অর্থাৎ এখান থেকে যে অতিরিক্ত মুনাফা আপনার একাউন্টে জমা হবে সেটি থেকে বিরত থাকতে হবে।

এবং এই কাজটি খুবই সহজ। আপনি যদি ব্যাংকের কর্মকর্তাকে এই সম্পর্কে অবগত করেন তাহলে তারা আপনার একাউন্ট থেকে এই বিষয়টি মুক্ত করে দিবে৷ যাতে করে আপনার জমানো টাকা হালাল হবে এবং আপনি আপনার নিজস্ব অর্থ ভোগ করতে পারবেন।

‘যারা সুদ খায় তারা জিনে ধরা পাগল ব্যক্তির মতো হাশরের মাঠে দাঁড়াবে। তাদের এ অবস্থার কারণ এই যে, তারা বলেছে, ব্যবসা তো সুদের মতোই। অথচ আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল করেছেন আর সুদকে হারাম করেছেন। প্রতিপালকের নির্দেশ আসার পর যে ব্যক্তি বিরত হয়েছে, সে পূর্বে যা নিয়েছে তা তারই থাকবে। তার ব্যাপার আল্লাহর এখতিয়ারে। কিন্তু এ নির্দেশের পরেও যারা সুদে জড়িত হবে তারা জাহান্নামে যাবে। তারা চিরকাল সেখানেই থাকবে। আল্লাহ সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন এবং দান-খয়রাতকে বর্ধিত করেন। কোনো অস্বীকারকারী পাপীকে তিনি পছন্দ করেন না। 

আপনি যদি লক্ষ্য করেন তাহলে দেখতে পারবেন, ব্যাংকে টাকা জমানোর ক্ষেত্রে আপনার লাভ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কম।

সেক্ষেত্রে ব্যাংকে টাকা না জমিয়ে, সেই একই টাকা দিয়ে আপনি যদি কোন জমি ক্রয় করেন কিংবা স্বর্ণ ক্রয় করেন তাহলে সেটি টাকা জমানোর চেয়ে বেশি মূল্য বহন করবে।

কারণ যতদিন যাবে, মুদ্রাস্ফীতি তত বেশি বৃদ্ধি পাবে এবং একই সাথে জিনিসপত্রের দাম হুর হুরিয়ে বৃদ্ধি পাবে। যার ফলে আপনি যদি স্বর্ণ ক্রয় করেন কিংবা যেকোনো পরিমাণে জমি ক্রয় করেন তাহলে সেটি টাকা একটা জমানোর চেয়ে বেশি মূল্য দিবে।

Fancy Subscribe Button
     

Banks-bd.com এখন ইউটিউবে!!

     

নিত্য নতুন ব্যাংকিং রিলেটেড ইউটিউব ভিডিও পাওয়ার জন্য আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে ভিজিট করতে পারেন৷

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top